স্বাদে গুণে অন্যতম সুগন্ধি চাল পশ্চিমবঙ্গের তুলাইপাঞ্জি।
তুলাইপাঞ্জি চাল স্বাদে গুণে যার জুরি মেলা ভার। অসাধারণ সুগন্ধিযুক্ত চাল তুলাইপাঞ্জি। এই চালের পোলাও, বিরিয়ানি, পায়েস, খিচুড়ি খেলে তৃপ্তিতে ভরে যাবে মন। আবার সুগন্ধি তুলাইপাঞ্জি চালের তৈরি গরম ভাতের সঙ্গে ঘি ও বেগুন পোড়া মাখা অনেকের কাছেই অমৃত সমান। যেভাবেই রান্না করে পরিবেশন করবেন সুগন্ধি তুলাইপাঞ্জিকে সেভাবেই সে তার নিজ গুণে আপনাকে মুগ্ধ করবেই। প্রকৃতির এক অমূল্য দান এই সুগন্ধি চাল তুলাইপাঞ্জি।
শ্রাবণ মাসে তুলাইপাঞ্জির চারা রোপণ করা হয়। অগ্রহায়ণ মাসে ধান পেকে ওঠে। চারা থাকাকালীনই মাঠের চারিপাশ সুগন্ধে ভরে ওঠে। উত্তর দিনাজপুরের সামান্য ঢালু জমি এই চাষের জন্য উপযুক্ত। কারণ অতিবর্ষার জল যাতে রোপণ করা চারাগুলির ক্ষতি করতে না পারে। এই তুলাইপাঞ্জি ধান চাষের সময় কোন রকম সার প্রয়োগ করলে এর সুগন্ধ কমে যায়। গোবিন্দভোগের থেকেও সুস্বাদু এই চাল। তুলাইপাঞ্জির আতপ চাল পায়েসের জন্য অসাধারণ। আবার সিদ্ধ তুলাইপাঞ্জি চাল পোলাও আর বিরিয়ানির জন্য উপযুক্ত। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরে তুলাইপাঞ্জির চাষ হয়। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ, হেমতাবাদ, করনদিঘি, কালিয়াগঞ্জ ও ইটাহার ব্লকে এই চাল চাষ করা হয়। এই জেলায় প্রতি বছর গড়ে 6 হাজার 390 হেক্টর জমিতে 12 হাজার টন ধানের চাষ করা হয়। জেলা কৃষি দপ্তরের সূত্র অনুযায়ী বিঘা প্রতি জমিতে প্রায় সাড়ে 6 মন ধান হয়। 1 কুইন্টাল ধান থেকে প্রায় 50 থেকে 54 কেজি চাল পাওয়া যায়। যদিও নকল চালও বাজারে পাওয়া যায়। তাই স্বাদ পেতে গেলে আসল চালের চয়ন করতে হবে । আসল চাল ঘষলে সুগন্ধ পাবেন, যেটা নকল চালে পাবেন না।
শোনা যায় রায়গঞ্জের বিন্দোলে 400 বছর আগে প্রথম তুলাইপাঞ্জির চাষ করা হয়েছিল। বাজারে অজস্র সুগন্ধী চাল থাকলেও তুলাইপাঞ্জির মত স্বাদ আর গন্ধ আর কোন চালে নেই। তুলোর মতো নরম যার জন্য এর নাম তুলাইপাঞ্জি। চাল ফোটালে মাত্র পাঁচ মিনিটেই ভাত তৈরি হয়ে যায়। ঘরময় চালের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। হেমতাবাদের কৃষক ননী রঞ্জন রায় বংশ পরম্পরায় এই ধানের চাষ করে আসছেন। তিনি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করেন এই ধানের চাষ করে। ননী রঞ্জন রায় গর্বের সঙ্গে বললেন পৃথিবীর কোথাও পাবেন এমন চাল। গোলাপ ,জুঁই যেমন তাদের গন্ধে মানুষকে মাতিয়ে রাখে তেমনি গন্ধ আছে তুলাইপাঞ্জিতে। তাঁর মতে বাংলা তথা ভারতের শ্রেষ্ঠ চাল তুলাইপাঞ্জি। সিদ্ধ তুলাইপাঞ্জি চালের প্রতি 80 থেকে 90 টাকা করে দাম হয়। আবার আতপ তুলাইপাঞ্জি প্রতি 120 থেকে 130 টাকা কেজি দাম হয়। প্রতি মঙ্গলবার উত্তর দিনাজপুরের মোহিনীগঞ্জে চাষিরা এই চাল বিক্রি করতে আসেন। এই চালের বিদেশে রপ্তানি বাড়াতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে।
Post a Comment