নতুন প্রজন্মের ইঞ্জিনিয়ারা উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শিল্প তৈরী করুক,সেটাই হবে শিল্প দেবতা বিশ্বকর্মার পুজো।
ময়ূমী মুখোপাধ্যায়: অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর
ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড কমুনিকেশন ডিপার্টমেন্ট
মল্লভূম ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলোজি, বিষ্ণুপুর
প্রতি বছর ভাদ্র সংক্রান্তির দিনটিতে দেব শিল্পকার বিশ্বকর্মা পুজো অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় প্রতি বছর ইংরাজীর ১৭ ই সেপ্টেম্বর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই পুজো নিষ্ঠা সহকারে পালন করে। কিন্তু কেই এই বিশ্বকর্মা আর কেনই বা আমরা তাঁর পুজো করি? হিন্দু পুরাণ মতে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা যখন অনন্ত শুন্যের মাঝে প্রাণ সৃষ্টিতে মগ্ন ছিলেন তখন তাঁর সমস্ত চিন্তা কে বাস্তবায়িত করার রূপকার ছিলেন এই দেব বিশ্বকর্মা। এছাড়া দেবতাদের বাসস্থল তথা ব্যবহারসামগ্রী যথা রথ, অস্ত্র শস্ত্র, অলংকারাদি তিনি নিমার্ণ করেন। এছাড়া মর্ত লোকের কিছু অনন্য সৃষ্টি যেমন শ্ৰী কৃষ্ণের দ্বারকাপুরী, রাবনের স্বর্ণলংকা, পুরীর জগন্নাথ দেবের বিগ্রহ তাঁর হাতেই সৃষ্ট। মহাভারতে পঞ্চ পাণ্ডব যখন হস্তিনাপুর থেকে বিতাড়িত হন তখন তাঁদের বাসস্থানের জন্য একটি রুক্ষ অনুর্বর জমি প্রদান করা হয়। সেই অনুপযোগী জমিকেই বাসযোগ্য করে তোলেন দেব শিল্পকর্মা। এক অপূর্ব নগরী ও মায়া প্রাসাদ তিনি নির্মাণ করেছিলেন যাকে আমরা ইন্দ্রপ্রস্থ নামে চিনি। অর্থাৎ পুরাণ ও মহাকাব্যের বর্ণনা অনুযায়ী তৎকালীন সমস্ত রকম নির্মাণ ও স্থাপত্যে তাঁর উল্লেখ পাওয়া যায়। তাই শিল্প ও কারিগরী বিদ্যার আদিদেব হিসেবে হিন্দু ধর্মে তিনি পূজিত হন।
বিজ্ঞান মানব সভ্যতার অগ্রগতির সূত্র ধরা হয়। আদিম যুগের চাকা আবিষ্কারের সূচনা থেকে যে পথ শুরু হয়েছিল তা আজও অব্যাহত। বিজ্ঞানীদের নিরন্তর প্রচেষ্টার নিদর্শন স্বরূপ আজ আমরা প্রাণী জগতের সর্ব শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে পরিগণিত হই। কিন্তু শুধুই বিজ্ঞান এই উন্নতির পথের একনিষ্ঠ ভাগীদার নয়। জ্ঞান আহরণ যদি বিকাশের উৎস হয় তাহলে তার ব্যবহারিক প্রয়োগ সেই উৎসের গতিপথ হয়। প্রকৌশলী ও স্থপতি গণ তাদের অর্জিত জ্ঞানকে প্রয়োগ করে অসীম অধ্যবসায় আর শ্রম দিয়ে নতুন নতুন সৃষ্টি পৃথিবীতে রচিত করেন। তাদের সমস্ত সৃষ্টির অনুপ্রেরণা দেব শিল্পী বিশ্বকর্মা।
কিন্তু আজ আমরা এক আশ্চর্য যুগসন্ধিতে অবস্থান করছি। জ্ঞান তো আমরা অর্জন করি ঠিকই। কিন্তু তার সঠিক প্রয়োগ আমরা করতে পারি না। আজ আমরা বিজ্ঞানের দানকে ধংসের কাজে ব্যবহার করছি। সৃজনশীলতা আমরা ভুলে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। সভ্যতার মূলমন্ত্র থেকে আমরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। তাই দেব বিশ্বকর্মার দেখানো পথ আজ আমরা সঠিক ভাবে অনুসরণ করি না। আজকের দিনে সমস্ত যন্ত্র নির্মাণ কারক ও ব্যবহৃত সংস্থা বিশ্বকর্মার পুজো আড়ম্বরের সহিত পালন করে। তাই বিভিন্ন অফিস, কল- কারখানা, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও কিছু কিছু স্কুলেও বিশ্বকর্মা পুজোর প্রচলন আমরা দেখি। কিন্তু কিছু পুজো সামগ্রী ও উপাচার কখনই প্রকৃত পুজোর নিদর্শন নয়। বর্তমান প্রজন্মের শিল্পকার তথা প্রকৌশলী ও শিক্ষানবিশ শিল্পকারদের আমরা এই বার্তা দিতে চাই যে তারা যেন তাদের অর্জিত জ্ঞানকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। এখন অনেক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের আমরা দেখি নতুন সৃষ্টিতে তারা মগ্ন। কে বলতে পারে তাদের সেই সৃষ্টি হয়তো ভবিষ্যতের বড় কোনো রূপান্তরের পথিকৃৎ হবে।তাদের নির্মাণ যন্ত্রদেব বিশ্বকর্মার সৃষ্টি ও কর্মকে যোগ্য সম্মান দেবে। নব প্রজন্মের কারিগররা তাদের কার্যে নিযুক্ত থাকুক, তারা আরো নতুন দিক রচনা করুক। তবেই এই সভ্যতা আরো দীর্ঘপথ অতিক্রম করবে অবলীলায় আর আমরাও শিল্প দেবতা বিশ্বকর্মা ও তাঁর রচনাকে যোগ্য সম্মান দিতে পারব।
তথ্যসমৃদ্ধ সুন্দর একটি প্রয়াস, আগামীদিনে এইরকম প্রবন্ধ আরও আশা করতেই পারি.....
ReplyDelete