১২-ই জানুয়ারী স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন স্মরণে।
যে সন্ন্যাসী ভারতীয় যুবাদের বীর হওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছেন।
শ্রীজাতা সাহা সাহু, কলকাতা
দুরন্ত ছিলেন, ছোটবেলায় মা ভুবনেশ্বরী দেবীর কাছে তাঁর দৌরাত্ম্যের জন্য অনেক অভিযোগ করতেন পড়শিরা । কিন্তু সেই ছেলেটি যখন চোখ বন্ধ করে পদ্মাসনে বসে গভীর ধ্যানে মগ্ন হয়ে যেতেন তখন সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ । তিনি বন্ধুদের কাছে আদরের বিলে। নরেন্দ্র নাথ দত্ত(নরেন) জগৎ জয় করেছিলেন তাঁর বিপুল দার্শনিক তত্ত্বের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার বিশ্বব্যাপী প্রসারে, পাশাপাশি, দেশের তরুণ সম্প্রদায়কে স্বাধীনতার মণ্ত্রে দীক্ষিত করার লক্ষ্যে তাঁর অনুপ্রেরণা এবং তাঁর ‘কর্মযোগ’ ভারতের যুবাদের মধ্যে সঙ্কল্প, দৃঢ়চিত্ত এবং নির্ভীক সঞ্চার করেছিল। কর্মের জন্য তাঁর ডাক, শক্তির জন্য তাঁর ডাক এবং দুর্বলতা পরিহার করার ডাক বহু যুবাকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল সেসময়। তিনি বলেছিলেন, ‘ওঠ, জাগো এবং থেমো না যতক্ষণ না লক্ষ্যে পৌঁছোচ্ছ’ ।
স্বামী বিবেকানন্দ বা নরেন মাঝেমাঝেই বলতেন ‘যেমন ভাববে তেমনই হবে । যদি তুমি নিজেকে দুর্বল ভাবো তাহলে দুর্বল হবে । যদি নিজেকে শক্তিশালী ভাবো তবে তুমি শক্তিশালীই হবে ।’
তিনি প্রায়ই বলতেন ‘তারাই জীবিত যারা অপরের জন্য বাঁচে । বাকিরা বেঁচে থেকেও মরার সামিল’ । যুবাদের কাছে স্বামীজী আদর্শ চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন কারণ, তিনি যুবাদের শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে এবং আত্মিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে প্রেরণা জুগিয়েছিলেন । দেশ গঠনে তাদের ভূমিকার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছিলেন তিনি । বিবেকানন্দ ভারতকে প্রাণবন্ত -যুবাদের দেশ হিসেবে গণ্য করতেন । সেই যুবা যারা আধুনিক দেশ গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা নেবে । তিনি বলেছিলেন, ‘নিজরা শেখার সুযোগ করে নাও, অপরকেও শেখাও তাদের চারিত্রিক বলিষ্ঠতা তৈরি করতে। বলিষ্ঠতা আসবে, গরিমা আসবে, সুদিন আসবে, যা কিছু উৎকৃষ্ট সবই আসবে । যখন ঘুমন্ত আত্মাকে জাগিয়ে আত্মসচেতন করা সম্ভব হবে তখন অসম্ভব-ও সম্ভব হবে’ ।
স্বামী বিবেকানন্দ যুব সমাজকে প্রেরণা দিয়েছেন আত্মবিশ্বাসী হতে । এর পেছনে যুক্তিটি হল-- মানুষ জীবনে চ্যালেঞ্জ নিতে ভীত হয় যখন তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে এবং সেই জন্য এই নিঃশঙ্ক সন্ন্যাসী যুবা সমাজকে বার্তা দিয়েছিলেন -‘আমি চাই লোহার মতো পেশি, ইস্পাতের মত স্নায়ু, তাদের মধ্যে থাকবে এমন একটি মন যা বজ্রের মতো উপাদান দিয়ে গড়া ’ । ১৯৮৫ থেকে ভারত সরকার স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনটি (১২ই জানুয়ারি) জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালন করে আসছে । বিবেকানন্দের বার্তা জাতপাতের শৃঙ্খল ভেঙে দিয়ে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের কথা বলেছিল। তাঁর ভাবনা, আদর্শ আজকের দিনের যুব সমাজের কাছে অত্যন্ত মূল্যবাণ । তিনি আজকের যুব সমাজের সামনেও চিরায়ত শক্তির প্রতীক এবং সত্যের চিরন্তন প্রতিরূপ ।
সরকারও ক্রমাগত চেষ্টা করে চলেছে যাতে স্বামী বিবেকানন্দের বাণীকে কর্মে পরিণত করা যায়। ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’, ‘আত্মনির্ভর ভারত’, ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-এর নীতি মেনে শুধু শ্লোগানই নয়, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা বিশেষ করে যুব সমাজের প্রতি দেশকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে সরকার যথার্থই ব্যগ্র। সম্প্রতি একাধিক ঐতিহাসিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দেশ গঠনের কাজে দেশের যুবকদের যাতে সমর্থকরা ব্যবহার করা যায়। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ শুরু হয়েছে ভারতকে আন্তর্জাতিক উৎপাদন হাবে পরিণত করার লক্ষ্যে । ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের লক্ষ্য ভারতকে ডিজিটাল ক্ষমতাপ্রাপ্ত সমাজে এবং নলেজ ইকনমিতে রূপান্তর করা । ‘স্কিল ইন্ডিয়া’ শুরু হয়েছে ভারতীয়দের প্রয়োজনীয় দক্ষতায় প্রশিক্ষিত করার জন্য । স্মার্ট সিটিজ প্রকল্প- সহ একাধিক উদ্যোগ শুরু হয়েছে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ।
সরকারের এই সকল উদ্যোগের জন্য প্রয়োজন যুব সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সমর্থন । কারণ তারাই দেশের ভবিষ্যৎ । স্কিল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচি ভারতকে উন্নত দেশের সারিতে আনার লক্ষ্যেই সৃষ্টি । সরকার সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে দেশের যুব সমাজে প্রভূত পরিমাণ লগ্নি করতে । কারণ, আধুনিক এবং উন্নত ভারত গড়ার উচ্চাশা পূরণে তা যথার্থই প্রয়োজন ।
স্বামীজী সেই ভারতের স্বপ্ন দেখতেন যেখানে যুব সমাজ একত্রিত হবে বড় কিছু লক্ষ্য সাধনের জন্য । তিনি বলতেন, ‘বড় কিছু হয় শুধুমাত্র বড় আত্মত্যাগ দ্বারাই, স্বার্থপরতা নয়, নাম নয়, যশ নয়, তোমার আমার নয়, আমার প্রভু নয়, ধারনা কর, পরিকল্পনা কর, আমার সাহসী ছেলেরা তোমাদের সুদিকগুলি লাগাও সৃষ্টির চাকায় এবং সেই চাকাটি তুলে নাও নিজেদের কাঁধে ।’
আসুন আমরা সকলে স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শকে অনুসরণ করে নতুন ভারত গড়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হই, অনুপ্রাণিত করি আমাদের তরুণ সম্প্রদায়কে নতুন উদ্যমে কাজ করে যেতে এবং নিজেরাও কাজ করি এমনভাবে যাতে আগামী দিনে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারি ভারতবর্ষকে ।
মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার, পিআইবি কলকাতা
Post a Comment