আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের চেতনা সাহু এবং ৫০-ঊর্ধ্ব দেশের ১৩ জন মহিলা পর্বতারোহী ২০২২-এর ট্রান্স হিমালয়ান এক্সপিডিশন-এর পথে।
পশ্চিমবঙ্গের শ্রীমতী চেতনা সাহু (৫৫ বছর) এভারেস্টের শিখর ছুঁয়ে ছিলেন হয়তো একটু বেশি বয়সেই, তবে, এখনও পর্যন্ত তিনি ভারতীয় হিমালয়ের প্রায় ১০টি চূড়া ছুঁয়েছেন।
২০১৮ সালে তিনি মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণ করেন। সুদক্ষ পর্বতারোহী, চেতনা প্রথম এভারেস্টজয়ী ভারতীয় মহিলা কুমারী বাচেন্দ্রী পালের নেতৃত্বে অল ইন্ডিয়ান উইমেনস ট্রান্স হিমালয়ান এক্সপিডিশনের অঙ্গ হিসাবে অরুণাচল থেকে সিয়াচেন হিমবাহ পর্যন্ত ৪০০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ সাত মাসে সম্পূর্ণ করেন একসময়।
শ্রীমতী সাহু এবং দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ১৩ জন কৃতী মহিলা পর্বতারোহী পদ্মভূষণপ্রাপ্তা প্রথম এভারেস্ট-জয়ী পর্বতারোহী কুমারী বাচেন্দ্রী পালে (৬৮)-এর সঙ্গে এবার ট্রান্স হিমালয়ান অভিযানের পথে। কুমারী পাল প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি ১৯৮৪ সালে মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণ করেছিলেন। এবার তিনি পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২০২২ Fit@50+ উইমেন্স ট্রান্স হিমালয়ান এক্সপিডিশনে। 'ফিট ইন্ডিয়া' ব্যানারে কেন্দ্রীয় যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রকের সঙ্গে যৌথভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের উপলক্ষে এই অভিযানটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে আগামী ৯ মার্চ। অভিযানটিকে সুসম্পন্ন করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী, ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ বাহিনী (আইটিবিপিএফ) এবং সশস্ত্র সীমাবল (এসএসবি) ।
২০২২-এর FIT@50+ মহিলাদের ট্রান্স হিমালয়ান অভিযান ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করছে এবং একই সঙ্গে 'আজাদি কা অমৃত মহোৎসব'-কে এই অভিযানটি উৎসর্গ করা হয়েছে।
পাঁচ মাসের দীর্ঘ অভিযানে রয়েছে পূর্ব থেকে পশ্চিমে হিমালয় অতিক্রম করার অদম্য স্পৃহা। রয়েছে অরুণাচল থেকে লাদাখ পর্যন্ত ৪৯৭৭ কিলোমিটারের বেশি পথ এবং প্রায় ৩৭টি গিরিপথ অতিক্রম করার অদম্য বাসনা। ১৪-সদস্যের দলটি অরুণাচল প্রদেশ থেকে যাত্রা শুরু করবে এবং অসম, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, নেপাল, কুমায়ুন, গাড়োয়াল, হিমাচল, স্পিতি, লেহ লাদাখ হয়ে টাইগার হিল (কারগিল) এ শেষ হবে যাত্রাটি। এর উচ্চতা ১৬,৬০৮ ফুট।
৯ মার্চ আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে অরুণাচল প্রদেশের কুয়াশাচ্ছন্ন পর্বতমালার পাং-সা-উ পাস থেকে এবং তারপর অসমের ভৈরব কুণ্ডায় প্রবেশ করবে দলটি। এরপর দলটি জয়গাঁয়ে যাবে এবং পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের সীমান্তে নগরকণ্ঠ হয়ে জুলুকে পৌঁছাবে। সেখান থেকে অভিযানদলটি নাথাং উপত্যকা হয়ে সিকিমে পৌঁছাবে, নাথুল্লা পাস দিয়ে গ্যাংটকে যাবে এবং চিত্রে, কালা পোখারি এবং সান্দাকফু (১১৯৩০ ফুট) সিঙ্গালিয়া অভয়ারণ্যে পৌঁছবে। দলটি এরপর নেপালে চলে যাবে, যেখানে যাত্রাপথটি ধৌলাগিরি রেঞ্জে প্রবেশ করে সলপা পাস, লামাজুরা পাস (১১,৫০০ফুট), দেওরালি পাস (৯,২৪০ ফুট / মালি পাস (৭,৯০০ফুট) এবং অন্নপূর্ণা ম্যাসিফের চারপাশে থোরাং লা (১৭,৭৬৯ ফুট) অতিক্রম করবে। পশ্চিম নেপাল থেকে জুমলা হয়ে পথটি চলে যায় উত্তরাখন্ডের কুমায়ুন জেলায় অবশ্যই দারচুলা (নেপাল) হয়ে। এখান থেকে অভিযানটি কৌরি কাল (১২,০০০ ফুট) অতিক্রম করবে, অতিক্রম করবে লামখাগা পাসের (১৭,৩২০ ফুট) সবচেয়ে কঠিন পথ, যেটি হিমাচল প্রদেশের কিন্নৌরকে সংযুক্ত করে উত্তরাখণ্ডের হর্ষিলের সঙ্গে।
এই অভিযানের লক্ষ্য, কর্মক্ষম থাকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা এবং প্রদর্শন করা যে বয়স এবং লিঙ্গ একটি সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারার পথে কোন বাধা নয়। এটি আমাদের সমগ্র সম্প্রদায়ের জন্য নারীর ক্ষমতায়ন, নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, জীবনধারা এবং ফিটনেসের গুরুত্বকেও নির্দেশ করে। যেহেতু বিশ্বব্যাপী আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পেয়েছে, 50+ এবং তার বেশি ব্যক্তিদের কার্যক্ষম বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই অভিযানটি সমস্ত বয়সের মহিলাদের সুস্থ থাকার জন্য তাদের দৈনন্দিন জীবনে ফিটনেস কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করতে উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করবে।
Post a Comment